শবে বরাতের নামাজের নিয়ম — শবে বরাত অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তির রাত’। শবে বরাতের করণীয় সম্বন্ধে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, "আমার কাছে শাবান মাসের রোজা অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের কাছে শাবানের রাত অর্থাৎ শবে বরাত হাজির হবে, তখন তোমরা সেই রাতটি জাগ্রত থাকো, নামাজ পড়ো, জিকির করো, তাসবিহ পড়ো, দোয়া করো, কোরআন তেলাওয়াত করো এবং দিনের বেলা রোজা রাখো।
কেননা, এই রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্তের পরে থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে এসে ঘোষণা দেন, আছে কি এমন কোনো ব্যক্তি যে তার গুনাহ মাফ করার জন্যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহসমূহ মাফ করে দিবো। আছে কি এমন কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী, যে আমার কাছে রিজিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিজিকের ব্যাবস্থা করে দিবো।
আছে কি এমন কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি, যে আমার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি সেই ব্যক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবো। এই ভাবে সারারাত মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দার উপর বৃষ্টির মতো রহমত নাজিল হতে থাকে। (ইবনে মাজাহঃ ১৩৮৪, বায়হাকিঃ ৩৮২৩)।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
শবে বরাতের নফল নামাজের নিয়ম হলো, অন্য নফল নামাজের মতোই ২ রাকাত করে নামাজ পড়া। প্রতি রাকাতেই সূরা ফাতেহার পরে পবিত্র কোরআনের যেকোনো সূরা পড়া। তারপর যথানিয়মে রুকু ও সিজদা করা এবং অন্য রুকনগুলো আদায় করা। এই ভাবে ২ রাকাত নামাজ শেষ করা।
২ রাকাতা বা ৪ রাকাত নামাজ পড়ার পরে কিছু সময় দোয়া, দরুদ, তাসবি, তাহলিল পাঠ করা, জিকির করা ও কোরআন তেলাওয়াত করা। এরপরে আবার নামাজের জন্য দাঁড়ানো। নামাজের পরে আবার জিকির আজকার করা, কোরআন তেলাওয়াত করা, তাওবা বা ইস্তেগফার করা, দীনি আলোচনা শোনা এবং কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা পড়া ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ
এই ভাবে সাধ্য অনুযায়ী আপনি যত রাকাত নামাজ পড়তে পারেন। শবে বরাতে নামাজের রাকাতের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নাই। পবিত্র কুরআন মাজিদে সাধ্য অনুযায়ী নফল ইবাদত করার জন্য ইঙ্গিত করা আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা সাধ্যের বাইরে কোনো কিছু করার জন্য চাপিয়ে দেননা। এই ব্যাপারে বাড়াবাড়ি, ছাড়াছাড়ি কোনোটাই করা যাবেনা। এই নিয়মটি এজন্য বলা হচ্ছে যে, একাধারে একটি আমল করতে থাকলে হয়তোবা কারো কারো একঘেয়েমি লাগতে পারে, তাই পরিবর্তন করে আমলগুলো করে এই বরকতময় রাতটি ইবাদতে কাটিয়ে দেয়া সহজ হবে।
ইসলামে নফল নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট নিয়ম বানিয়ে নেয়া সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কৃত বিদাত। এই ব্যাপারে সকল যুগের সকল আলেম একমত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের সাহাবায়ে কেরাম কখনো তা পড়েননি। এই রাতে যেহেতু দীর্ঘ সময় পাওয়া যায় তাই আমরা ফজিলতময় নামাজ সালাতুত তাসবিহ আদায় করতে পারি।
শবে বরাতের নামাজ জীবনে একবার হলেও আদায় করার তাগিদ আছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত মোহাম্মাদ (সা.) আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিব (রা.)-কে বলেছেন, হে চাচা! আমি কি আপনাকে দিবোনা? আমি কি আপনাকে প্রদান করবো না? আপনি ৪ রাকাত নামাজ আদায় করবেন। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করবেন। প্রথম রাকাতে যখন কেরাত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন- সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
আরো পড়ুনঃ কোন নামাজ কত রাকাত
এরপর রুকুতে যাবেন এবং রুকু অবস্থায় দোয়াটি ১০ বার পাঠ করবেন। এরপর রুকু থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পাঠ করবেন। তারপর সিজদায় যাবেন। সিজদা অবস্থায় ১০ বার পাঠ করবেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এরপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদা অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার। আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন।
আপনি যদি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তাহলে সেটা করুন। আর যদি আমল করতে না পারেন, তবে প্রতি জুম্মাবারে একবার। যদি প্রতি জুম্মাবারে না করেন, তাহলে প্রতি মাসে ১ বার করুন। আর যদি এটাও সম্ভবপর না হয়, তাহলে জীবনে ১ বার আদায় করুন। যখন ২য় রাকাতে তাশাহুদ পড়ার জন্যে বসবেন তখন পূর্বে ঐ তাসবিহ ১০ বার পাঠ করবেন, তারপর তাশাহুদ পাঠ করবেন। তাশাহুদের পরে তাসবিহ পরবেন না। তারপর আল্লাহু আকবার বলে ৩য় রাকাতের জন্যে উঠবেন। তাররপর ৩য় রাকাত এবং ৪র্থ রাকাতেও উক্ত নিয়মে ঐ তাসবিহ পাঠ করবেন।
কোনো ১ স্থানে ওই তাসবিহ পাঠ করতে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে কিংবা ভুল করে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পাঠ করলে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক, সেখানকার সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নিবেন। আর এই নামাজে কোনো কারণে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সিজদা ও তার মধ্যকার বৈঠকে ঐ তাসবিহ পাঠ করতে হবেনা।
তাসবিহ সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্যে আঙুলের কর গণনা করা যাবেনা, তবে আঙুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে। (আবু দাউদঃ হাদিস ১২৯৭, ইবনে মাজাহ: হাদিস ১৩৮৭, বায়হাকি কুবরা: হাদিস ৪৬৯৫)। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের শবে বরাতের পরিপূর্ণ সওয়াব এবং শবে বরাতে ফজিলত লাভ করার তওফিক দিন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।